নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ছাত্ররাজনীতি বলতে বর্তমান শিক্ষার্থীদের সামনে গত ১৫ বছরের নোংরা রাজনীতি দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, মাদকাসক্ত এসব চিত্রই ভেসে উঠে এজন্যই শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির যে দীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস রয়েছে সেটা আমরা ভুলতে পারিনা। ছাত্ররাজনীতি না থাকলে হয়তো ৫২ এর ভাষা আন্দোলন,৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন,৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন,এমনকি ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান সফল হতো না। কারণ প্রতিটি গণআন্দোলনের শুরুটাই হয় ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন গুলোর মাধ্যমে। ২৪ এর নতুন স্বাধীনতার নেপথ্যে থাকা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের শুরুর কথায় যদি বিবেচনা করি তাহলে দেখতে পাবো আন্দোলনের শুরুটা গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন সহ ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মাধ্যমে হয়েছে, পরবর্তীতে ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সহ সকল ছাত্র সংগঠন গুলো অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিটি জেলা-উপজেলা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র সংগঠন গুলোর নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে সকল জায়গায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা কর্মীদের সাহসী নেতৃত্বের ভুমিকা ছিলো অপরিসীম। তাই রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা একেবারে অস্বীকার করার উপায় নেই, যদি ছাত্র রাজনীতি না থাকতো তাহলে হয়তো ২৪ এর স্বাধীনতা এভাবে আসতো না, ১৮এর কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে ২৪ এর স্বাধীনতা পরবর্তী সময় পর্যন্ত ভিপি নুর, রাশেদ, মামুন, আসিফ, নাহিদ, আখতার সহ বিল্পবী নেতৃত্বগুলো তৈরি হতো না।
একেবারে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে রাষ্ট্র নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে,নেতৃত্বগুলো ছাত্র জীবনে তৈরি না হলে পরবর্তীতে জীবনে তৈরি করা সম্ভব না। রাষ্ট্রপরিচালনায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রযোজনীয়তা অপরিসীম, যার অভাব আমরা বর্তমান অন্তবর্তীকালী সরকারের মাঝেই লক্ষ করছি। নইলে দেশে ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেলে কেমন বেহাল দশা হয় সেটাও গত কয়েক বছরে দেখেছি আমরা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের নেতৃত্ব তৈরি হওয়া একটা চেইন থাকা প্রয়োজন যা ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই উঠে আসে।
এখন মূল কথা ছাত্র রাজনীতির সংস্কার কিভাবে হবে? এটা হলে হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ সহ প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ চালুর মাধ্যমে এবং ছাত্র সংসদের নেতৃত্ব নির্বাচন হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদের নেতৃত্ব তৈরি করা সম্ভব হয় তাহলে কোনো চাঁদাবাজ, মাদকাসক্ত, ধর্ষণকারী, হল দখলকারীকে ভোট দিয়ে নেতা হিসেবে নির্বাচন করবে না, আপনা আপনিই এই নেগেটিভ ক্যারেকটার গুলো ঝরে পড়বে, মেধাবী-সৃজনশীল-প্রগতিশীল নেতৃত্ব উঠে আসবে যা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসেবে সহায়ক হবে।
আরেকটা বিষয় হতে পারে রাজনীতি টার্ম টাই পরিবর্তন করা। রাজনীতি বলতে আগে ছাত্র তারপর রাজনীতি, এখানে তার পড়াশোনা আগে হবে তারপর রাজনীতির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করা এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অবদান রাখা। ছাত্র সংগঠন গুলোর কাজ হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে লক্ষে কাজ করা, ক্যাম্পাস ভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক কাজ করা, ক্যারিয়ার ও রাষ্ট্র ভাবনায় বিভিন্ন সভা-সেমিনার করা, পাঠচক্র আয়োজন করা, নিজস্ব লাইব্রেরি তৈরি করা, যে শিক্ষার্থী যার ক্যারিয়ারে যেভাবে ফোকাস করতে চান সেই সেক্টরগুলো তে সহায়ক ভুমিকা পালন করা। আমরা ছাত্ররাজনীতি শব্দটাকে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখি,এক্ষেত্রে শব্দটাকে পরিবর্তন করে সামাজিক সংগঠন গুলোর মতো জন্য কোনো টার্ম ইউজ করা যায় কিনা সেটাও ভাবনার বিষয়।
দলীয়-দাসত্ব, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি পরিহার করে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিতে ও ছাত্রদের অধিকার আদায়ে সতন্ত্র ছাত্ররাজনীতি অবশ্যই চালু থাকা প্রয়োজন।যার যৌক্তিক সংস্কার ছাত্র সংসদ চালুর মাধ্যমে হতে পারে।
মোহাম্মাদ আলী তোহা
শিক্ষার্থী
সেশন( ২০১৮-১৯)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,গোপালগঞ্জ।
সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ
সম্পাদক: মোস্তাফিজুর রহমান।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ৪৫, শিরোইল পুবালি মার্কেট,(২ তলা) ,বোয়ালিয়া ,রাজশাহী।
ফোন নাম্বার- 01713846301
ইমেইল: agrajatrajibon@gmail.com
Copyright © 2024 Dainik Uttarbanga. All rights reserved.