• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ন

বিএনপির পরিচয়ে আ’লীগ পন্থী ঠিকাদারের বিল উত্তোলন

Reporter Name / ৪১ Time View
Update : রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিনিধি:ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে আ’লীগ পন্থী ঠিকাদার এবং রাজশাহী উন্নয়ন কতৃপক্ষের কিছু কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

রাজশাহীর শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্ক ও প্রান্তিক নামে আবাসিক প্রকল্পে লুটপাটের মহাৎসব চলেছে। ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের সরকার পতনের পর পরই এসব প্রকল্পের আ’লীগ পন্থী ঠিকাদারদের বিল আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আরডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিকের নেতৃত্বে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। ইয়াহিয়া মিলু নামে এক ব্যক্তি যুবলীগ নেতা রনি’র পাওয়ার অফ এটনি নিয়ে বিল উত্তোলন করেছেন। তিনি নিজেকে বিএনপির নেতা পরিচয় দেন। যুবলীগ নেতা রনি’র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ছিলো। কাজ পেতেও প্রভাবশালী মহলের ইন্দন ছিলো।নগরীর ভদ্রা এলাকায় প্রায় ১৩ একর জায়গার ওপর ১৯৮২ সালে পার্কটি গড়ে তোলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। এটি ‘ভদ্রা পার্ক’ নামেই পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে পার্কটির বদনামও ছিল। অভিভাবকেরা তাদের শিশুদের নিয়ে এই পার্কে যেতে পারতেন না। তবে সংস্কার করার লক্ষ্যে ভদ্রা পার্কটি’ ৪৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সাজিয়ে তোলা হয় নতুন রূপে। পার্কটির কাজ এখনো অনেক বাকী আছে। প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথমবারের মতো সংস্কার কাজ চলছে পার্কটিতে।
আরডিএ থেকে জানা গেছে,পার্কটির উন্নয়নে ২০২০ সালে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সে বছরের জুলাইয়ে প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়। কাজের প্রস্তুতি নিতে নিতেই ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন পার্কের পুরোদমে কাজ বন্ধ আছে।
এর মধ্যে দুটি লটে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি’র রিথিন এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ২৬ কোটি ৯৩ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ড্রেন, জলাধারের জন্য রিটেইনিং ওয়াল, সীমানা প্রাচীর, পুকুর সংস্কার, পুকুর থেকে পারিজাত লেক পর্যন্ত খাল খনন, জলাধারের ওপর তিনটি নান্দনিক ব্রিজ, রাস্তাঘাট, অ্যাম্পি থিয়েটার, রিফ্রেশ জোনসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে। এ ছাড়া ১৩ কোটি ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫৭ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করছে পার্কের সার্ভিস স্টেশন, দুটি টয়লেট ব্লক, পার্কের বাইরে রেস্ট হাউস, পার্কিং স্টেশন, ট্রয় ট্রেন স্টেশন ও প্লেয়িং জোন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর প্রতিষ্ঠানটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পলাতক আছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক রনি।
যুবলীগ নেতা রনি’র রিথিন এন্টারপ্রাইজের কাজ শেষ হলে প্রাইম ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ট্রেন, বোটসহ বিভিন্ন ধরনের রাইড স্থাপন করবে। তাতে ব্যয় হবে ৪ কোটি ৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এ ছাড়া মদিনা এন্টারপ্রাইজ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুতের কাজ সম্পন্ন করবে। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯২ টাকা। পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনে শেষপর্যায়ে পুরো এলাকাতেই আবার বৃক্ষরোপণ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার দিচ্ছে প্রায় ৪৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। আর ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার বেশি দিচ্ছে আরডিএ। প্রতিটি কাজে আরডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিককে দিতে হয়েছে ২০% কমিশন। অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ হয়েছে। এর আগে এ প্রকৌশলী বিরুদ্ধে ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি অভিযোগ উঠেছিলো। সেসব ঘটনায় বহু পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশও হয়েছে। তবুও অজ্ঞাত কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি তৎকালীন কতৃপক্ষ। তারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তিনি সব চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করেই এমন অনিয়ম দূর্নীতি করেন।
পার্কটির সংস্কার নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, বিপুল অর্থ ব্যয়ে সংস্কার হওয়া পার্কটিতে সবই নিম্নমানের কাজ হয়েছে।
আরডিএ’র একাধিক সুত্র বলছে, রাজশাহী উন্নয়ন কতৃপক্ষ এর ১৭২ কোটি ৬৪ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকার চলমান দুইটি প্রকল্প ভদ্রা পার্ক ও প্রান্তিক নামের এই দুটি প্রকল্পর মূল ঠিকাদার যুবলীগের সাধারন সম্পাদক তৌহিদ আল মাসুদ (রনি)। কিন্তু আরডিএ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক মৌখিকভাবে জানিয়েছে,রনি এবং মিলু তারা দুজনে পার্টনার ছিলেন। পাওয়ার এটনির মাধ্যমে রনির কাজ গুলো এখন মিলু করছে এবং গত ৩দিন আগে মিলু প্রায় ৬ লক্ষ টাকার একটি বিল তুলেছে। ঠিকাদার তৌহিদ আল মাসুদ রনির তিনটি বেশ বড় মাপের বিল বিএনপি পন্থী পরিচয় দাতা মোঃ ইয়াহিয়া (মিলু) উত্তোলন করেছেন বলেও সুত্র নিশ্চিত করেছে। হত্যা মামলা আসামী পলাতক থেকে কিভাবে বিল উত্তোলন বা পাওয়ার অফ এটনি দিলেন তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
এ বিষয়ে জানতে পার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আরডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিককে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তাঁকে বক্তব্য পেতে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন প্রকার সাড়া দেননি। অফিসে গেলেও তিনি দেখা করেননি।
বিল উত্তোলনের অভিযোগ স্বীকার করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াত মো: রহমতুল্লাহ বলেন, আমি অফিসিয়ালি বক্তব্য দিতে পারবো না। তবে পাওয়ার অফ এটনি নিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। কাজ সাময়িক বন্ধ ছিলো এখন কাজ চলমান আছে।
এসব বিষয়ে জানতে আরডিএ’র চেয়ারম্যান এস এম তুহিনুর আলমকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category